প্রতি বছর বন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি

প্রতিবেদক • ঢাকা

প্রকাশ: June 22, 2024, 7:41 p.m.
প্রতি বছর বন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি

প্রতি বছর বন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। বিশ্ব গবেষণা সংস্থাগুলো মনে করছে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও চলমান বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও, কৃষি অধিদপ্তর মনে করছে জাতীয় পর্যায়ে তেমন প্রভাব পড়বে না। যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের ৫০ জেলায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৫ লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা।

পাহাড়, হাওড়, জলাভূমি সহ বিস্তৃত এলাকায় নানা ধরণের ফসল চাষ হয় সিলেট অঞ্চলে। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলে বৈচিত্র্যময় ফসলের সম্ভার রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের এই দুই অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়, যা বিশেষ করে কৃষকদের লালিত স্বপ্নকে ধ্বংস করে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটে কয়েকদিনের বন্যায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। ভেসে গেছে মাছের খামার, নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। উত্তরের পদ্মা, যমুনা, করতোয়া নদীতে অতিরিক্ত পানির জোয়ার দেখা দিচ্ছে। কত ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও জরিপ করা হয়নি। তবে কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

কৃষি অর্থনীতিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, "এই বন্যায় শুধু হাওড় এলাকা নয়, বরং সমগ্র সিলেট অঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যার কারণে সিলেটে ফসলসহ অন্যান্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।"

কৃষি বিভাগের মতে, জুন মাসের এই বন্যায় খাদ্য নিরাপত্তায় সংকট তৈরি হবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, "এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হল - বোরো ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। তবে বন্যার্ত এলাকাগুলোতে শাক-সবজির আবাদসহ সাময়িক ক্ষতি হলেও, সেই ক্ষতি পূরণ করে নেওয়া সম্ভব।"

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বন্যার প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। বন্যা প্রতিরোধে উন্নত বাঁধ ও নালা নির্মাণ, দ্রুত সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই ক্ষতি কমানো যেতে পারে।

তাছাড়া, বন্যা পূর্বাভাস ও মনিটরিং সিস্টেম উন্নত করা জরুরি, যাতে পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বন্যার প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যা একটি সাধারণ ঘটনা হলেও, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, যাতে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনে প্রভাব কমিয়ে আনা যায়।


আরও পড়ুন