সংযুক্ত আরব আমিরাতে চাকরির নামে বাংলাদেশি নারীদের পাচার

প্রতিবেদক • ঢাকা

প্রকাশ: July 16, 2024, 5 p.m.
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চাকরির নামে বাংলাদেশি নারীদের পাচার

ভিজিট ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে চাকরির নামে নারী পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, এই নারীদের দুবাই, শারজাহ ও আবুধাবির বিভিন্ন নাইট ক্লাবে বিক্রি করা হয়। এরপর যৌন ক্রীতদাসী হিসেবে গড়ে ৩ থেকে ৪ বার বিক্রি করা হয় তাদের; চলে অকথ্য নির্যাতনও।

ফাতিমা নামে এক নারী অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা, সন্তানের পড়াশোনা আর সংসারের হাল ধরতে হিমশিম খাওয়ার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি রেস্তোরাঁয় ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে পড়ে। কিন্তু ঢাকা থেকে দুবাইয়ের দেইরা এলাকায় পৌঁছেই বুঝতে পারেন তার গন্তব্য একটি নাইট ক্লাব।

সাড়ে ৪ মাসের নরক যন্ত্রণা শেষে ফাতিমাকে নাইট ক্লাব থেকে শারজাহ ও আবুধাবিতে বিক্রি করা হয় আরও তিনবার। মাথা গোঁজার ঠাঁই ভিটে বিক্রি করে মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দিয়ে অবশেষে আধমরা হয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তার ভাষ্য, তিনি বেঁচে ফিরলেও বন্দিশালায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে, অর্ধশত তরুণী এখনও বন্দি পাচারকারীদের হাতে।

আইনে ৯০ দিনে অভিযোগ গঠন এবং ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান থাকলেও আদালতে মানবপাচারের মামলা নিষ্পত্তিতে গড়ে সময় লাগছে ৩ থেকে ৫ বছর। বছরের পর বছর আদালতে চক্কর কেটে হতদরিদ্র মানুষগুলো মামলার খরচ চালাতে গিয়ে হচ্ছেন আরও নিঃস্ব।

পুলিশ সদর দফতরের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ভুক্তভোগীদের করা ১৪৫টি মামলা। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৭৮টি।

মানবপাচার সিন্ডিকেটে আছে প্রভাবশালীদের যোগসাজশ। এতে অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়াঁর বাইরে -- এমন অভিযোগ অভিবাসন কর্মীদের।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানব পাচারসংক্রান্ত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ দেশের বিভিন্ন আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া ৩৩২টি মামলার মধ্যে ৩১৬টিতেই সব আসামি খালাস পেয়েছেন। অর্থাৎ, ভুক্তভোগী নারীদের জন্য বিচার পাওয়া এখনও অত্যন্ত কঠিন।

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচারের সমস্যাটি মারাত্মক। এই সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পাচার প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাচারের উৎসস্থল এবং গন্তব্যস্থলে সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে পাচারকারীদের আটক করা উচিত।


আরও পড়ুন