চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর এক ঝলক

প্রতিবেদক • ঢাকা

প্রকাশ: May 22, 2024, 1:17 a.m.
চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর এক ঝলক

চা বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় পানীয়, যা জলের পরেই সর্বাধিক পান করা হয়। চীনের ইউনান প্রদেশকে চায়ের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সেখান থেকেই এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। যুগে যুগে চায়ের আবেদনও বেড়েই চলেছে। যদিও বিশ্বের মাত্র গুটিকয়েক দেশ এই ক্রমবর্ধমান চায়ের চাহিদা মেটাতে পারে।

শীর্ষ ৫টি চা উৎপাদনকারী দেশ:

১।চীন: খ্রিষ্টের জন্মের দেড় হাজার বছর আগে চীনের ইউনান প্রদেশে একটি ঔষধি পানীয় হিসাবে চা পানের প্রচলন শুরু হয়েছিলো। তাই সারাবিশ্বে এই স্থানটি চায়ের জন্মস্থান নামে পরিচিত।

চা মূলত তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে এর থেকে চা উৎপাদন করা হয়। ব্ল্যাক টি (র' চা), গ্রিন টি (সবুজ চা), হোয়াইট টি (সাদা চা), এমনকি উলং টি’র মতো হাজার প্রকারের চা আছে বিশ্বে। কিন্তু সেগুলোর সবই তৈরি করা হয় ওই গাছের পাতা থেকে।

প্রতি বছর ভিয়েতনাম, মরোক্ক’র মতো অনেক দেশ চীন থেকে প্রচুর চা আমদানি করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর মাঝে শীর্ষ আমদানিকারকদের তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও মিশর।

    • বার্ষিক উৎপাদন: ৩১ লাখ মেট্রিক টন (২০২২)
    • জনপ্রিয় চা: ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, হোয়াইট টি, উলং টি
    • চা সংস্কৃতি: চীনে চা কয়েক শতাব্দী ধরে জাতীয় পানীয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

২।ভারত: ভারতবর্ষে আগে চায়ের ব্যবহার তেমন একটা ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশরা ১৮০০ দশকের গোড়ার দিকে ভারতে চা ব্যবহার ও উৎপাদন করা শুরু করে।

  ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করা শুরু করে, তখন এই চা ছিল সমাজের   উঁচু শ্রেণির লোকদের পানীয়। পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের মাঝেও জনপ্রিয় হয়।

    • বার্ষিক উৎপাদন: ১৩.৫ লাখ মেট্রিক টন (২০২২)
    • জনপ্রিয় চা: আসাম, দার্জিলিং, নীলগিরি
    • চা সংস্কৃতি: ব্রিটিশরা ভারতে চা চাষ শুরু করে, তবে এটি বর্তমানে দেশের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে

 

৩।কেনিয়া: স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ কেনিয়ার নাম। কেনিয়াতে বছরে সাধারণত পাঁচ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়।

    • বার্ষিক উৎপাদন: ৫ লাখ মেট্রিক টন (২০২২)
    • জনপ্রিয় চা: কেনিয়ান ব্ল্যাক টি
    • চা সংস্কৃতি: চা কেনিয়ার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি এবং দেশে চা পানের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।

 

৪। শ্রীলঙ্কা: বিশ্বের শীর্ষ চা রপ্তানিকারী দেশের মাঝে শ্রীলঙ্কার নামও আছে। শ্রীলঙ্কার সিলন চা পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত।

    • বার্ষিক উৎপাদন: ২.৫ লাখ মেট্রিক টন (২০২২)
    • জনপ্রিয় চা: সিলন টি (ব্ল্যাক টি)
    • চা সংস্কৃতি: চা শ্রীলঙ্কার জাতীয় পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

৫। ভিয়েতনাম: চা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মাঝে এশিয়ার এই দেশটিও আছে। ভিয়েতনামের ব্ল্যাক ও গ্রিন টি'র খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তবে ভিয়েতনামের সবুজ চা'র কদর উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

এই দেশটি লোটাস (পদ্ম) ও জেসমিন (জুঁই) চায়ের জন্যও বিখ্যাত। পদ্মের পাতা, ফুল, শিকড়, ফল, বীজ বা ভ্রূণ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লোটাস চা তৈরি করা হয়। আর জেসমিন চা মূলত প্রস্ফুটিত জুঁই ফুল থেকে চায়ের সাথে সৌরভ মিশ্রিত করে একধরনের সুগন্ধি চা। জেসমিন চায়ের স্বাদ মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে।

    • বার্ষিক উৎপাদন: ১.১১ লাখ মেট্রিক টন (২০২২)
    • জনপ্রিয় চা: ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, লোটাস টি, জেসমিন টি
    • চা সংস্কৃতি: চা ভিয়েতনামের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দেশে চা পানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের অবস্থান:

ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম স্থানে। ২০২৩ সালে দেশে ১০২.৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।

 


আরও পড়ুন