মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি-দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি, ফসল ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি

প্রতিবেদক • ঢাকা

প্রকাশ: June 19, 2024, 4:08 p.m.
মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি-দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি, ফসল ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি

অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মৌলভীবাজার জেলার সকল নদী-নালা ও হাওড়ের পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে হাকালুকি ও হাইল হাওড়েও অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জেলায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি খরস্রোতা ধলাই নদীর বড়চেক-দেওড়াছড়া এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ও নতুন ভাঙনের ফলে পানি ঢুকে রহিমপুর ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টায় বড়চেক-দেওড়াছড়া এলাকার আশপাশে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয় এবং নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতাও বাড়ছে। প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট এলাকা জুড়ে ভাঙন দিয়ে তীব্র গতিতে পানি ঢুকছে, ফলে চৈত্রঘাট, বড়চেক, ছয়কুটসহ এ এলাকার প্রায় ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, ধলাই নদীর পানি বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে বড়চেক-দেওড়াছড়া এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের আগের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। সকালে নতুন ভাঙন দেখা দেয় এবং সকাল ৯টার পর পানির তোড়ে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে।

ধলাই নদীর দক্ষিণ ভাগ, ছয়কোট, বড়চেক গ্রামের কয়েকটি স্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান। এছাড়াও, লক্ষ্মীপুর এলাকার পুরাতন ভাঙন দিয়েও পানি ঢুকছে, এতে ওই এলাকায় বন্যার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওড় হাকালুকিতে পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর ফলে হাওড় পাড়ের উপজেলা কুলাউড়ায় তিনটি, জুড়ীতে তিনটি, বড়লেখায় চারটি এবং রাজনগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ এলাকার আঞ্চলিক মহাসড়কের বেশ কিছু স্থান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে, ফলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাকালুকি হাওড়ের পানির চাপে কুলাউড়া পৌরসভার কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে।

বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করছে। বন্যার কারণে এলাকার কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ধানের জমি, সবজি ক্ষেত এবং অন্যান্য রবি শস্যের জমি পানির নিচে চলে গেছে। কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। বন্যার পানি বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পানি দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বন্যাকবলিত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে এবং মেডিক্যাল টিম মোতায়েন করেছে। বন্যার কারণে এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং তাদের পাঠ্যক্রমে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্যার পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস বা পুনর্বাসন কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও, সরকার বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং সহায়তা প্রদানের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে মানুষের দুর্ভোগ কমানো যায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা যায়।


আরও পড়ুন