কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয়

প্রতিবেদক • ঢাকা

প্রকাশ: July 27, 2024, 8:04 p.m.
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে ঘিরে রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে প্রাথমিকভাবে মানুষের প্রাণহানি সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির কয়েকটি বড় খাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়।।

বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান শর্ত একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হলেও দেশটি এতটাই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে যে পুরো বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রথম ও দীর্ঘমেয়াদী আঘাত আসতে পারে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সময় সংবাদকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে দেশে যা ঘটেছে তা বিদেশি বিনিয়োগের ওপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ জিডিপির ১.৫% এরও কম, মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ ১২% এরও বেশি এবং অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পর শ্রীলঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগ ২০% এরও বেশি।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ৩.০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে এক বছরে বিনিয়োগ ১৬ শতাংশ কমেছে।

সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। সর্বোপরি, বিদেশীরা যদি দেখেন যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নিরাপত্তার অভাব রয়েছে, তাহলে এই বিনিয়োগ তলানিতে নেমে যাবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি এই সহিংসতা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) মতে, চলমান দ্বন্দ্বের কারণে দেশের গার্মেন্টস খাত প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। তাঁর মতে, গত কয়েকদিনে এই একটি ক্ষেত্রে মোট লোকসান ৮০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এই সঙ্কটের কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে রপ্তানি ও আমদানি স্থগিত রয়েছে। একই সঙ্গে দেশের পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যে এই আকস্মিক আঘাত রপ্তানি খাতকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিদেশে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে যে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে তা ছিঁড়ে ফেলতে তারা বিশেষভাবে ভয় পায়।

দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে বাণিজ্যিক বন্দরের কার্যক্রম চার দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। এ মহাসড়কে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। চালান আটকে থাকার কারণে বিদেশি ব্যবসায়ীরা সময়মতো পণ্য হাতে পেতে পারবেন না। আর এতে ব্যবসার ক্ষতি হবে।

এ প্রসঙ্গে সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলে বিদেশি ক্রেতারা আর বাংলাদেশকে বিশ্বাস করতে পারবেন না। তারা নতুন বাজার খুঁজতে শুরু করবে। শুধু বাংলাদেশই তৈরি পোশাক তৈরি করে না। বাকি বাজারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে বাংলাদেশের বাজারে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন এবং রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেই বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাণিজ্য ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সরকার টানা দুই বছর ধরে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় এক বছর ধরে ৯% এর উপরে রয়েছে এবং বেশিরভাগ সময় খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১০% এর উপরে থাকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছে যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯.৭২ শতাংশ এবং ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। নতুন অর্থবছরে বাজার পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, এই মুহূর্তে দেশের বাজারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কোনও ভালো খবর পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

বিশেষ করে, দেশের সরবরাহ খাত ক্রমাগত চলাচল এবং সরকার কর্তৃক ঘোষিত কারফিউয়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বৃহত্তম পাইকারি বাজারে দেখা যায়। টাইম নিউজের চট্টগ্রাম ব্যুরোর পাঠানো খবর অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে খাতুনগঞ্জের বিক্রি ৯০ শতাংশের বেশি কমেছে এবং প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের আজকাল এক ধরনের বেকারত্বের সময় কাটাতে হয়েছে, বিশেষ করে ইন্টারনেট না থাকায় এবং মহাসড়কে কারফিউ থাকায়।


আরও পড়ুন