প্রতিবেদক • ঢাকা
প্রকাশ: July 18, 2024, 8:11 p.m.সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত 'সম্পূর্ণ বন্ধ' কর্মসূচির সময় রাজধানীর রামপুরায় একটি পুলিশ বাক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় (১৮ জুলাই)।
এদিকে, রামপুরা ব্রিজের বিস্ফোরণে স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতা ফজলুল হক মিলন (৫৫) আহত হয়েছেন। তিনি রামপুরা শ্রমিক লীগের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তাঁর ভাগ্নে বাবর শেখ জানান, রামপুরার একটি হাসপাতাল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লেগেছে।
তিনি বলেন, তিনি ওয়ার্ড নং-এর সভাপতি। শ্রমিক লীগের ২২। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিস সহকারী হিসাবেও কাজ করেছিলেন। তিনি বলতে পারলেন না কেন তিনি রামপুরা সেতুতে গিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাচ্চু মিয়া জানান, তার মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কেউ জানে না এটা কিভাবে হল। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।এদিকে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২ ও ৩ নম্বর গেটের সামনে রাস্তায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ কর্মীরা রাত সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করছে।
'সম্পূর্ণ বন্ধ' কর্মসূচির কারণে রাজধানীতে যানজট কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে রাস্তায় বাসের সংখ্যা, বিশেষ করে স্থানীয় বাসের সংখ্যা কিছুটা কম। বেসরকারি বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, অটোরিকশা ও ট্যাক্সিও রাস্তায় ছিল না।
আন্দোলনের মুখে, সরকার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে, সরকারী চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ শ্রেণী পর্যন্ত কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে। সেই সময় সরকারি চাকরিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়াও, ১০ শতাংশ মহিলা, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ সংখ্যালঘু জাতিগত গোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। মোট ৫৬ শতাংশ।
২০২১ সালে কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক সাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছেলে আহিদুল ইসলামসহ সাতজন রিট করেন। হাইকোর্ট রিটের প্রাথমিক শুনানিতে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রায় দেয়। চূড়ান্ত শুনানির পর হাইকোর্ট ৫ জুন এই নিয়মটিকে সম্পূর্ণ (উপযুক্ত) বলে ঘোষণা করে।
পরে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে রাজ্যের আবেদনটি ৪ জুলাই শুনানির জন্য চেম্বার কোর্টের মাধ্যমে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে যায়। আবেদনকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি মুলতবি করে আদালত। এছাড়াও, রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল করার জন্য নিয়মিত ছুটি নিতে বলা হয়। (application for leave to appeal). গত ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই ছাত্র এবং রাজ্যের দায়ের করা আপিলটি ১০ জুলাই আপিল বিভাগে যায়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ পক্ষগুলোকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা সহ এই আদেশ জারি করা হয়েছিল। চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থার কথা উল্লেখ করে আপিল বিভাগ পরবর্তী শুনানি ৭ আগস্ট নির্ধারণ করে।আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ করছেন।
সোমবার দুপুরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কারকর্মীদের সংঘর্ষ হয় (১৫ জুলাই)। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার কর্মীদের সঙ্গেও ছত্র লীগের সংঘর্ষ হয়। আহত হয়েছেন বহু মানুষ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীতে ১৫-২০ টি জায়গায় রাস্তা অবরোধ শুরু করে। পুরো রাজধানী শহরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্র লীগের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পুলিশ ও ছাত্র লীগের সঙ্গে কোটা সংস্কারকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তারপরেও দুষ্কৃতীদের রাস্তায় লড়াই করার সুযোগ দেবেন না। আমি সবাইকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা হাইকোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পাবে, তাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়।
1 month, 2 weeks
2 months, 1 week
3 months, 1 week
3 months, 1 week
3 months, 1 week