ইউরোপীয় ইউনিয়ন পোশাক আমদানি কমিয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব

প্রতিবেদক • ঢাকা

প্রকাশ: June 23, 2024, 12:45 a.m.
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পোশাক আমদানি কমিয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), তৈরি পোশাকের বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার, সম্প্রতি বিশ্ববাজার থেকে পোশাক আমদানি কমিয়েছে। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শিল্পে বড় প্রভাব ফেলছে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে ইইউতে পোশাক রপ্তানি ৯.৮৫% কমেছে। একই সময়ে, ২০২২ সালের তুলনায় ইইউ সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পোশাক আমদানি ৬.২৮% কমিয়েছে।

এই আমদানি হ্রাসের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো ইউরোপীয় দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, ফলে তারা কম পোশাক কিনছে। এছাড়াও, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও ইউরোপীয় অর্থব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে পোশাকের মতো অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদাও কমেছে।

ইইউ-এর পোশাক আমদানি কমার ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিশিল্পে বেশ কিছু প্রভাব পড়েছে। প্রথমত, রপ্তানি আয় কমেছে। দ্বিতীয়ত, পোশাক কারখানায় উৎপাদন কমেছে। তৃতীয়ত, অনেক শ্রমিকের চাকরি হারানোর ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। চতুর্থত, বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে এবং স্থানীয় বাজারে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ও রপ্তানি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজার অন্বেষণ করা হচ্ছে। পোশাকের দাম কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পোশাকের মান ও নকশা উন্নত করা হচ্ছে। এছাড়া, সরকার কিছু নীতিগত পরিবর্তন এনেছে যাতে রপ্তানিকারকদের কিছু কর সুবিধা দেওয়া যায় এবং উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা যায়।

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাতকে আরও উন্নত করতে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া, কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা মান উন্নয়নের জন্যও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য মিশনে যোগদান। এর মাধ্যমে নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আরেকটি বড় সুযোগ হলো টেকসই উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার। বৈশ্বিক বাজারে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক মানের সনদ গ্রহণ এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করা যায় এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শিল্প ইইউ-এর বাজারে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবে এবং নতুন বাজারে আরও বিস্তার লাভ করবে। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগগুলো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।


আরও পড়ুন